সমকাল নাট্যচক্র
নাটকের মধ্য দিয়ে সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের আশা-আকাঙ্খার প্রতিফলন ঘটানোর ব্রত নিয়ে এবং শোষিত-বঞ্চিত মানুষের প্রতি অন্যায়-নিপীড়নের প্রতিবাদ জানানোর লক্ষ্যে ১৯৮১ সালের ২৫ নভেম্বর রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সবুজ চত্বরে প্রতিষ্ঠিত হয় নাট্য সংগঠন সমকাল নাট্যচক্রের। সমকাল কেবলমাত্র একটি নাট্যচর্চার চারণভূমি নয়, বরং জীবনচর্চা ও মানবমুক্তি আন্দোলনের তীর্থভূমিও বটে।
সূচনালগ্ন থেকেই সংগঠনটির পথচলা কিছুটা ভিন্ন ধরণের। সংগঠনটি বিশ্বাস করে শিল্প শুধুই মনন বিকাশের নয়, বরং জীবন পরিবর্তনের অন্যতম হতিয়ার। আর শিল্পের উল্লেখযোগ্য একটি ধারা নাট্যচর্চার মধ্য দিয়েই গড়ে তোলা সম্ভব সামাজিক বিপ্লব। কেননা ঐতিহাসিকভাবে নাটকই মানুষের হৃদয়ের অলিন্দে কঠোরভাবে প্রতিধ্বণিত করে আসছে শ্রেণিবৈষম্য, কুসংস্কার, মৌলবাদ ও সাম্প্রদায়িকতাসহ নানামুখী সামাজিক সমস্যার কথা। তাই সামগ্রিক বিবেচনায় সমকাল নাট্যচক্রের শ্লোগান- "নাটক শাণিত হচ্ছে, শোষকেরা সাবধান"।
বিগত চারটি দশক সমকাল তাঁর সৃষ্টির প্রতিশ্রুতিকে অটুট রেখেছে নানামুখী শিল্পচর্চা ও আন্দোলনের মধ্য দিয়ে। যে আদর্শ বুকে লালন করে একাত্তরের মহান মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ নামের একটি স্বাধীন ও সার্বভৌম রাষ্ট্রের জন্ম হয়েছিল, তাঁর উপর বিভিন্ন সময়ে বারবার নেমে এসেছে অপশক্তির কালো থাবা। স্বৈরশাসন, অপশাসন ও মৌলবাদ তিলে তিলে ধ্বংস করেছে বাঙালি চেতনার মূলভিত্তিকে। তদুপরি সাংস্কৃতিক আগ্রাসন, অশিক্ষা ও অনুৎপাদনশীলতা এদেশের মানুষকে করে তুলেছে আরও পশ্চাদপর ও নেতিবাচক। সমকাল বরাবরই সংযুক্ত থেকেছে উল্লেখিত অনাচারের বিরুদ্ধে আন্দোলন সংগ্রামে। পাশাপাশি সমুন্নত রেখে চলেছে গ্রুপ থিয়েটারের আদর্শকেও।
শিল্পচর্চার ক্ষেত্রে সমকাল বরাবরই আপোষহীন। শ্যামল ভাদুড়ীর "তথাপি সূর্য আসে" নাটক মঞ্চস্থের মধ্য দিয়ে সমকালের নাট্যচর্চার যে ইতিহাস সূচিত হয়, তা পূর্ণতা লাভ করে মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের "ছোট বকুলপুরের যাত্রী", তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়ের "কবি", বিজন ভট্টাচার্যের "নবান্ন" মঞ্চস্থ করার মাধমে। এছাড়াও সমকালের উল্লেখযোগ্য নাটক চক্রবুহ, সেঙ্গেল, ধ্বস, অবরুদ্ধ ইতিহাস, রক্তবীজের বংশধর, জোঁক প্রভূতি। এ পর্যন্ত মঞ্চনাটক ও পথনাটক সব মিলিয়ে সমকাল ৭০টি নাটক প্রযোজনা করেছে। দেশের বিভিন্ন স্থানে মঞ্চায়ন সংখ্যা প্রায় অর্ধসহস্র।
বর্তমানে সমকাল নাট্যচক্র রাকসু ভবনের নিচ তলায় তাঁদের মহড়া চালিয়ে যাচ্ছে। নাট্যচর্চার পাশাপাশি সমকাল গান, আবৃত্তি, নৃত্যশিল্প ইত্যাদির চর্চাও করে থাকে। এছাড়া বিশেষায়িত জ্ঞান লাভের জন্য নিয়মিত কর্মশালা ও পাঠচক্রের আয়োজন করে থাকে। প্রগতিশীল, মুক্তচিন্তার অধিকারী সংস্কৃতিপ্রেমী সকল শিক্ষার্থীর জন্য সমকালের দুয়ার সর্বদা উন্মুক্ত।
